জরুরী বিজ্ঞপ্তি :
প্রসেসর হচ্ছে স্মার্টফোন কিংবা অন্যান্য কম্পিউটার ডিভাইস গুলোতে থাকা এক প্রকার গুরুত্বপূর্ণ (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) HARDWARE যা ব্যবহারকারীর থেকে ইনপুট গ্রহণ করে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আউটপুট প্রদান করে । আজকালকার কম্পিউটার ডিভাইস গুলো প্রসেসরের উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয় । এজন্যই আজকালকার কম্পিউটার ডিভাইস গুলোকে প্রসেসর নির্ভর বলা হয়ে থাকে । মূলত প্রসেসরই কম্পিউটারের সমস্ত কার্য সম্পাদন করে থাকে ।
মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে যেমন মস্তিষ্কের গুরুত্ব সর্বাধিক । তেমনিভাবে , প্রসেসর হচ্ছে কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ HARDWARE . কম্পিউটার প্রসেসর মানুষের মস্তিষ্কেরই নামান্তর ।
অনেকেই প্রসেসরকে কম্পিউটারের প্রাণ বলে থাকে । এটি একেবারেই অযৌক্তিক । কেননা কম্পিউটারের HARDWARE গুলো মানুষের শরীরের অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের সদৃশ ।
মানুষ যা করে তা মস্তিষ্কের আদেশেই করে কিংবা মস্তিষ্ক নিজেই সম্পাদন করে থাকে । কিন্তু কাজগুলো করে হাত - পা কিংবা অন্যান্য অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের সাহায্যে । তেমনিভাবে প্রসেসর , ব্যবহারকারীর ইনপুটকে প্রক্রিয়াকরণ করে কম্পিউটারের বিভিন্ন HARDWARE এর সাহায্যে আউটপুট প্রদান করে । এখানে প্রসেসর মানুষের মস্তিষ্কের ভূমিকাই পালন করে । অতএব , মানুষের অঙ্গ - প্রত্যঙ্গকে যেমন মানুষের প্রাণ বলাটা অযৌক্তিক তেমনিভাবে প্রসেসরকে কম্পিউটারের প্রাণ বলাটাও অযৌক্তিক ।
সাধারণত আজকালকার কম্পিউটার গুলোতে একের অধিক (একাধিক) প্রসেসর সংযুক্ত থাকে । প্রসেসরের অপর নাম CPU বা CENTRAL PROCESSING UNIT . তবে বর্তমান সময়ের কম্পিউটার মাদারবোর্ড গুলোতে GPU বা GRAPHICS PROCESSING UNT নামের আরেক ধরনের প্রসেসর সংযুক্ত থাকে । GPU হচ্ছে CPU এর একটি আধুনিক (ADVANCE) সংস্করণ ।[১]
প্রসেসরের কার্য পদ্ধতিসম্পাদনা
প্রসেসরের কার্য পদ্ধতি নিম্নে তথ্য ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো :
প্রসেসর এর কাজ হচ্ছে কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম এবং কম্পিউটারের HARDWARE এর মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া । প্রসেসর মূলত ব্যবহারকারীর ইনপুটকে প্রক্রিয়াকরণ করে আউটপুট প্রদান করে । যেমন : গান শোনা , গ্যামস খেলা , মুভি দেখা ইত্যাদি । কম্পিউটারের সকল কাজ কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ তথা প্রসেসরই করে থাকে ।
প্রসেসরের প্রকারভেদসম্পাদনা
কাজের উপর ভিত্তি করে প্রসেসরকে চার ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
- মাইক্রো প্রসেসর
- মাইক্রো কন্ট্রোলার
- এমবেডেড প্রসেসর
- ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসর
তবে আমাদের কম্পিউটার (মাইক্রো কম্পিউটার কিংবা মোবাইল কম্পিউটার) গুলোতে যেহেতু মাইক্রো প্রসেসর ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
মাইক্রো প্রসেসরসম্পাদনা
মাইক্রো শব্দের অর্থ ছোট । শুরুতে যেসব ইলেকট্রিক্যাল কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয় তা রাখার জন্য প্রয়োজন হতো বিশাল , হল রুমের । তার প্রধান কারণ ছিল কম্পিউটারের বিশাল যন্ত্রাংশ । বিশাল এই কম্পিউটারকে ছোট করার প্রচেষ্টার ভিত্তিতেই মাইক্রো প্রসেসর উদ্ভাবনের সূচনা হয় ।
1971 খ্রিষ্টাব্দে INTEL CORPORATION সর্বপ্রথম মাইক্রো প্রসেসর উদ্ভাবন করে । মাইক্রো প্রসেসর মূলত অসংখ্য INTEGRATED CIRCUIT বা IC এর সমন্বয়ে গঠিত এক প্রকার HARDWARE .
প্রসেসরের গঠনসম্পাদনা
মাইক্রো প্রসেসর বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে গঠিত । যথা :
- CONTROL UNIT
- CACHE MEMORY
- ARITHMETIC LOGIC UNIT
- REGISTER
- BUSES
- CLOCK
ক্লক স্পীডসম্পাদনা
একটি প্রসেসর কতটা দ্রুত কাজ করবে তা নির্ভর করে প্রসেসরের CLOCK SPEED এর উপর । একটি প্রসেসর প্রতি সেকেন্ডে কতটি কাজ সম্পন্ন করতে পারে তাই হচ্ছে তার CLOCK SPEED . সাধারণত দুইভাবে CLOCK SPEED মাপা হয় । যথা :
( i ) MHz বা 1 MILLION CYCLES PER SECOND
( ii ) GHz বা 1 THOUSAND MILLION CYCLES PER SECOND
প্রসেসরের কোরসম্পাদনা
একটি প্রসেসর কতটা কার্য ক্ষমতাসম্পন্ন তা নির্ভর করে প্রসেসরের কোরের উপর ।
উদাহরণ স্বরূপ : মনে করুন আপনি একটি দুতলা বাড়ি করবেন । এক্ষেত্রে একজন কর্মীকে দিয়ে বাড়িটি তৈরি করতে অনেক সময় ব্যয় হবে এবং সে কাজটি সম্পন্ন নাও করতে পারে । কিন্তু সেখানে যদি 30 জন কর্মী একত্রে কাজ করে তাহলে খুব দ্রুত এবং নিপুণ ভাবে কাজটি সম্পন্ন হবে ।
এখানে প্রসেসরের কোর এক বা একাধিক মানুষেরই ভূমিকা পালন করে । তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রসেসরে যত বেশি কোর থাকবে কম্পিউটার ডিভাইসটি ঠিক তত বেশি কার্যক্ষমতা সম্পন্ন ।
কার্যক্ষমতা এবং কোরের উপর ভিত্তি করে মাইক্রো প্রসেসরকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
SINGLE CORE PROCESSOR : এই ধরনের প্রসেসরে মাত্র একটি কোর সংযুক্ত থাকে । যার ফলে মাল্টি টাস্কিং সুবিধাজনক নয় । বর্তমান সময়ে এই প্রসেসর সংযুক্ত কম্পিউটার ডিভাইস খুঁজে পাওয়া বিরল ।
DUAL CORE PROCESSOR : এই ধরনের প্রসেসরে দুটি কোর সংযুক্ত থাকে । অর্থাৎ , এই ধরনের প্রসেসরে দুটি প্রসেসিং ইউনিট থাকে । যার ফলে এটি SINGLE CORE PROCESSOR এর থেকে অনেক দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে পারে । তবে আজকাল এই ধরনের প্রসেসরও খুব কম ব্যবহৃত হয় ।
QUAD CORE PROCESSOR : এই ধরনের প্রসেসরে চারটি কোর সংযুক্ত থাকে । এটি DUAL CORE PROCESSOR এর থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ।
HEXA CORE PROCESSOR : এই ধরনের প্রসেসরে ছয়টি কোর সংযুক্ত থাকে ।
OCTA CORE PROCESSOR : এই ধরনের প্রসেসরে আটটি কোর সংযুক্ত থাকে । এটি MULTIPROCESSOR ARCHITECTURE এর সাহায্যে ডিজাইন করা হয়েছে । এটি খুব উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর । সাধারণত আজকালকার স্মার্টফোন এবং অন্যান্য কম্পিউটার ডিভাইস গুলোতে OCTA CORE PROCESSOR ব্যবহার করা হয় ।
DECA CORE PROCESSOR : এই ধরনের প্রসেসরে দশটি কোর সংযুক্ত থাকে । এটিই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর ।
জেনারেশনসম্পাদনা
আমরা জানি প্রসেসর অসংখ্য IC বা INTEGRATED CIRCUIT এর সমন্বয়ে তৈরি । আবার এই IC গুলো TRANSISTOR , RESISTOR , DIODE এবং CAPACITOR এর সমন্বয়ে তৈরি । একটি প্রসেসরে কয়েক কোটি TRANSISTOR ব্যবহার করা হয় ।
প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলো প্রতি দুই বছর অন্তর নতুন TRANSISTOR উদ্ভাবন করে ফেলে যা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছোট এবং অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন । নতুন এই TRANSISTOR দিয়ে প্রসেসর তৈরি করে বাজারজাতকরণ করা হয় প্রসেসরের জেনারেশন হিসেবে ।
নতুন জেনারেশনের প্রসেসর গুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং কম্পিউটার ব্যবহারের সময় গরম কম হয় । এজন্য কম্পিউটার ডিভাইস ক্রয়ের সময় নতুন জেনারেশনের প্রসেসর নেওয়াটাই শ্রেয় ।
FSBসম্পাদনা
FSB এর পূর্ণ রূপ ফ্রন্ট সাইড বাস । প্রসেসর RAM এর সাথে কতটা দ্রুত ডেইটা ট্রান্সফার (আদান - প্রদান) করছে সেটাই হচ্ছে প্রসেসরের FSB . তবে বর্তমান সময়ের প্রসেসর গুলোতে FSB এর পরিবর্তে QPI ব্যবহার করা হয় । যা FSB এর থেকে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ।
ক্যাশ মেমোরিসম্পাদনা
প্রসেসরের কার্য সম্পাদনের জন্য দুই ধরনের স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহৃত হয় । এই স্টোরেজ ডিভাইস গুলো প্রসেসরের সাথেই সংযুক্ত থাকে । যার মধ্যে ক্যাশ অন্যতম । এটি অত্যন্ত দ্রুতগতি স্টোরেজ ডিভাইস এবং ব্যয়বহুল ।
ক্যাশ মেমোরির আকার যত বেশি হবে প্রসেসর তত দ্রুত গতিতে কাজ করবে । সাধারণত আজকালকার কম্পিউটার গুলোতে 2 , 4 , 6 এবং সর্বোচ্চ 8 MEGA BYTE এর ক্যাশ মেমোরি ব্যবহার করা হয় ।
প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসম্পাদনা
জনপ্রিয় প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
- INTEL
- AMD
- QUALCOMM
- MEDIATEK
- SAMSUNG
- IBM
- HUAWEI
- NVIDIA
প্রভৃতি । তবে ডেস্কটপ , ল্যাপটপের ক্ষেত্রে INTEL অথবা AMD এবং স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে QUALCOMM বা MEDIATEK অধিক ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ।